রমজানে সারাদিন রোজা রেখে ত্বক কিছুটা
প্রাণহীন ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পানির অভাবে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়।
সিয়াম সাধনার পাশাপাশি এ সময় প্রয়োজন ত্বকের বিশেষ যত্নের। রোজার দিনে
সব কাজের পাশাপাশি নিজের জন্যও একটু সময় রাখতে হবে। রোজা রাখার কারণে শরীরে
পানির পরিমাণ কম থাকে আর তার প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকে। রোজা রাখার ফলে
অনেকেই ত্বকের যত্ন নিতে ভুলে যান। সব কাজের পাশাপাশি এ সময় ত্বকেরও একটু
আলাদা যত্ন নিতে হয়। প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে একদিন সময় করে ঘরে বসে নিতে
পারেন ত্বকের উপকারী কিছু প্যাক। আপনাদের জন্য তাই রইলো রমজানে ত্বকের
যত্নের বিশেষ কিছু টিপস্।
- সারাদিন রোজা রেখে ইফতারিতে অনেক বেশি
ভাজা খাবার খাওয়ার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে ত্বকে ব্রণ হয়। ত্বক হয়ে
যায় প্রাণহীন। কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো ব্রণের জন্য খুবই কার্যকর
দুটো উপাদান। সমপরিমাণ বাটা কাঁচা হলুদ এবং চন্দন কাঠের গুঁড়ো একত্রে
নিয়ে এতে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করতে হবে। মিশ্রণটি এরপর ব্রণ
আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেলে মুখ ঠান্ডা পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি শুধুমাত্র ব্রণ দূর করার কাজ করে না
বরং ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
- কমলা লেবুর খোসা শুকিয়ে মিক্সিতে
গুঁড়ো করে নিন। মসুরির ডাল আর চাল ভিজিয়ে ভালো করে পিষে নিন। ঐ পেস্টের
মধ্যে চন্দন পাউডার, মুলতানি মাটি, কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো
করে মিলিয়ে নিন। এই মিশ্রণের মধ্যে দুই চামচ দুধও মিশিয়ে নিতে পারেন।
মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর ধুয়ে নিন। এই প্যাকটা নিয়মিত মুখে লাগান।
তাহলে সারাদিন রোজা রাখার পরও ত্বকের জেল্লা বাড়বে।
- পানিশূণ্যতার কারণে এসময় ত্বকের
আর্দ্রতা কমে গিয়ে প্রাণহীন ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা
লোশন ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে পারেন। যাদের ত্বক সাধারণ
বা তৈলাক্ত তারা ওয়াটার বেইজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন আর যাদের ত্বক
শুষ্ক তারা ওয়াক্স বা ইমোলিয়েন্ট সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
এগুলো ত্বকের গভীরে আর্দ্রতা যোগায় এবং ত্বক ফেটে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা
করবে।
- রমজান মাসে সব রকমের টোনার জাতীয় প্রসাধনী এড়িয়ে চলা উচিত। এই ধরণের প্রসাধনী বেশি ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়।
-এসময় ঠোঁট অনেক বেশি ফেটে যায়। রাতে
ঘুমাবার আগে ঠোঁটে ভালো করে ভ্যাসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে ঘুমাতে
যাবেন। বেশি শুষ্ক ঠোঁটের যত্নে হালকা গরম নারিকেল তেল মাসাজ করে লাগান।
- এসময় ত্বক রাখতে হবে পরিষ্কার। নিয়মিত
স্ক্রাবিং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। পাকা পেঁপে চটকে নিন এক কাপ।
এর সাথে মেশান এক টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চালের
গুঁড়ো। মিশ্রণটি মুখসহ পুরো শরীরে লাগান। ২০-২৫ মিনিট মাসাজ করে গোসল করে
ফেলুন। পেঁপে ছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন ঘৃতকুমারীর (অ্যালোভেরা) রস।
-কাঠবাদাম বাটা, ঠাণ্ডা দুধ এবং গোলাপ জল দিয়ে তৈরি ফেস প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করুন। এটি শুষ্ক পানিশূন্য ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
- মুখের সাথে সাথে শরীরেরও যত্ন নিন। নিয়মিত ত্বকের উপযোগী ভালো কোন বডি লোশন ব্যবহার করুন।
-রোজায় ত্বকের যত্নে ফেসিয়াল খুব উপকারী।
বাসায় বসে ফেসিয়ালটা অনেক সময় ঠিকভাবে করা যায় না। তাই ভালো পার্লারে গিয়ে
বিউটি এক্সপার্টের পরামর্শ নিয়ে ত্বকের ধরন বুঝে ফেসিয়াল করে নিলে ভালো হয়।
এ সময় ফ্রুট ফেসিয়াল ও পার্ল ফেসিয়াল ত্বকের জন্য ভালো।
-আপেলের রস খুব উপকারী। এটি সব ধরনের
ত্বকের জন্য ভালো। কোরানো আপেলের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন
অথবা সরাসরি আপেলের রস ত্বকে লাগাতে পারেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন
ব্যবহার করলে বেশ ভালো ফল পাওয়া যাবে।
-টমেটো, কলা, শশা একসঙ্গে মিলিয়ে প্যাক
তৈরি করে ইফতারের ঘণ্টাখানেক পর ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
মালটার রসও সপ্তাহে চার-পাঁচদিন ত্বকে লাগাতে পারেন। যাদের ত্বক শুষ্ক তারা
ত্বকের শুষ্কতা কাটাতে সপ্তাহে চারদিন টমেটোর রস লাগাতে পারেন। নিয়মিত এটি
করলে দেখবেন ত্বকের শুষ্কতা কেটে যাবে।
-যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা সপ্তাহে দুদিন
শশা, গাজর, পুদিনা পাতার রস ও মসুর ডাল বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে
মুখে লাগাতে পারেন। ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
-যাদের ত্বক মিশ্র তারা এ সময় বেসন দিয়ে মুখ ধুলে বেশ উপকার পাবেন।
-যাদের ত্বক স্বাভাবিক তারা রান্নাঘরের
কাজ করতে করতে ডালের পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। আলু কেটে তার রস মুখে
লাগাতে পারেন। ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন।
রোজা বলে তো আর কাজ থেমে নেই, তাই দিনে
ত্বকচর্চা করা না গেলেও অন্তত দিনে তিন থেকে চারবার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে
নিতে হবে। অবশ্য নামাজ পড়লে আপনাকে আর এক্সট্রা এফোরট দিতে হবে না।
একটু সময় করে ত্বকের পরিচর্যা করলে দেখবেন রোজায়ও আপনার ত্বক
থাকবে সুন্দর ও কোমল। মনে রাখতে হবে ত্বক সুন্দর রাখা মানে শুধু বাইরের
রূপচর্চা নয়। শরীর সুস্থ থাকলে সব কিছুই ভালো থাকবে। তাই প্রথমেই আমাদের
খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। ইফতারিতে ভাজা খাবার একটা রেখে বাকি সব খাবার
ফল, দই, চিড়া, শরবত বা জুস রাখতে হবে। ইফতারির পর ভারী খাবার না খেয়ে
ঘণ্টাখানেক পড়ে এক গ্লাস ঘরে তৈরি জুস খেলে শরীরের পানির আভাবটা পূরণ হবে। এ
সময় কোল্ড ড্রিংস জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
লিখেছেনঃ রোজেন
No comments:
Post a Comment